
জাতিসংঘে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন
প্রতিনিধিত্ব থাকছে রোহিঙ্গাদেরও
- আপলোড সময় : ৩০-০৯-২০২৫ ১১:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩০-০৯-২০২৫ ১১:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন


মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর পরিস্থিতি নিয়ে প্রথমবারের মতো উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন আহ্বান করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের সদর দফতরে জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে ৩০ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী এই উচ্চ পর্যায়ের সভা আহ্বান করা হয়। এতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসহ অংশীজন, দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা ইস্যুতে সভায় বক্তব্য রাখবেন। তিনি তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের আহ্বান জানাবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রিত ও নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে। ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত পেরিয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রায় সোয়া লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এরপর রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি এসেছেন ২০২৫ সালে। ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, গত ৮ মাসে ৯৬টি নৌকায় প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যা গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ কমে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে নতুন সংকট। ইউএনএইচসিআর বলছে, চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা এসেছে বাংলাদেশে। তবে এখনও ঘাটতি আছে ১৫ কোটি ১২ লাখ ডলার। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজন মোট ২৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘে উচ্চ পর্যায়ের সভা আহ্বান করেছেন সাধারণ পরিষদের সভাপতি। ওই সভার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- রাজনৈতিক সহযোগিতা একত্রিত করা, রোহিঙ্গা সংকটের দিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি ফেরানো, পুরো সংকট নিয়ে পর্যালোচনা ও সংকটের মূল কারণ খুঁজে বের করা। একইসঙ্গে সভায় এ অঞ্চলের মানবিক সংকট, সংকটের একটি টেকসই, দীর্ঘমেয়াদি ও উদ্ভাবনী পরিকল্পনা খুঁজে বের করার চেষ্টাও করা হবে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছায় নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার বিষয়েও আলোচনা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, তিনটি ভাগে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধন পর্ব, আলোচনা এবং সমাপনী পর্ব। দিনব্যাপী সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে সভা শুরু হবে, চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। তবে মাঝখানে দুই ঘণ্টার বিরতি আছে। উদ্বোধনী পর্বে সাধারণ পরিষদের সভাপতি, জাতিসংঘ মহাসচিব, মহাসচিবের মিয়ানমার-বিষয়ক বিশেষ দূত, জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক হাইকমিশনার, মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার, সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা বক্তব্য রাখবেন। দ্বিতীয় পর্বে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রধান এবং তাদের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। আর সমাপনী পর্বে সাধারণ পরিষদের সভাপতি বক্তব্য রাখবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা আরও জানান, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরবেন। এছাড়া ড. ইউনূস কক্সবাজারে রোহিঙ্গা-বিষয়ক সম্মেলনে সংকট সমাধানে যে সাতটি প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন, সেটিও পুনরায় বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরতে পারেন। আশা করা হচ্ছে, সভা থেকে রোহিঙ্গা-সংকট সমাধানের একটা পথ বেরিয়ে আসবে। সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখবেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি আনালেনা বেয়ারবক , জাতিসংঘের মহাসচিবের পক্ষে মহাসচিবের কার্যনির্বাহী কার্যালয়ের চিফ দ্য ক্যাবিনেট আর্ল কোর্টেনে রাত্রে, উইমেনস পিস নেটওয়ার্ক-মিয়ানমারের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ওয়াই ওয়াই নু, মিয়ানমার বিষয়ে আসিয়ান চেয়ারের বিশেষ দূত ওসমান হাশিম, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপ, আরাকান ইয়ুথ পিস নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা রফিক হুসন, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, রিফিউজি উইমেন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক লাকি করিম, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভোলকার টার্ক এবং রোহিঙ্গা স্টুডেন্টস নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা মং সাওয়্যেদুল্লাহ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের উদ্যোগে সাধারণ পরিষদে এমন একটি উচ্চ পর্যায়ের সভার আয়োজন এবারই প্রথম। গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধান উপদেষ্টা প্রথমবারের মতো সব অংশীদারের অংশগ্রহণে জাতিসংঘের উদ্যোগে এমন একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা আয়োজনের প্রস্তাব করেন। প্রধান উপদেষ্টার ওই প্রস্তাব বিশ্বব্যাপী দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে একটি রেজুলেশনের মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের এবারের সভাটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই উচ্চ পর্যায়ের সভা থেকে যেন রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধানের একটি কার্যকর ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা উঠে আসে, সেজন্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গত মাসে (২৪-২৬ আগস্ট) কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো অংশীদারদের জন্য একটি সংলাপের আয়োজন করা হয়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ